যশোরের কেশবপুর উপজেলায় গো খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। গো খাদ্য সংকটের কারণে হঠাৎ করে দাম বেড়ে গেছে গো খাদ্যের। কেশবপুরের গ্ৰাম গঞ্জে এমন কোন বাড়ি নেই যে বাড়িতে একটা-দুইটা অথবা তার অধিক গরু নেই। কিন্তু এই গরু পালতে সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে গো- খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। আগে এক সময় গরু পালন লাভজনক ছিল। এখন গরু পালন করলে আর লাভ হচ্ছে না। গরুর প্রধান খাদ্য হচ্ছে বিচলি। কিন্তু হঠাৎ করে বিচলির দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে এক কাউন বিচলির দাম ছিল দুই হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে। এখন এক কাউন বিচলির দাম বেড়ে হয়েছে প্রকারভেদে ছয় হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকা।
গো খাদ্য বিচলি ছাড়াও অন্যান্য খাদ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এক কেজি গমের ভূষির দাম ৪৫ টাকা, ছোলার ভূষি ৬০-৬৫ টাকা, অ্যাংকর ভূষি ৫০ টাকা, মসুর ভূষি ৪০ টাকা, খুদ ৩৮ টাকা, ধানের কুড়া ১৪ টাকা, খৈল ৩৫ টাকা, ফিড ৩৮ টাকা এবং খড় ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি খাবারের ওপর কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও কাঁচা ঘাস (নেপিয়ার) এক আটির দাম আগে ছিল ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা তা এখন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। খাবারের এই বাড়তি খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন গরু পালনকারীরা।
বর্তমানে বাজারে গম আর মটরের চেয়ে দাম বেশি গো-খাদ্য ভূষির। প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে এসব গো-খাদ্যের দাম। এতে করে এসব ভূষির মূল ব্যবহারকারীরা বিপাকে পড়েছেন। সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে বাড়ানো হচ্ছে গো-খাদ্যের দাম। পাশাপাশি নিম্নমানের গো-খাদ্যে বাজার সয়লাব হয়ে পড়েছে।
কেশবপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থান এর পাশে বাড়ি হারুন অর রশিদ মনা জগ্ননাথ ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেই সাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি গরু পালন শুরু করেন। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, গরু পালন করে বেশ লাভ হচ্ছিল কিন্তু গত দুই-তিন বছর কোন রকম টিকে আছে। বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম অধিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় তা মরার উপর খাঁড়ার ঘা’র মত, গরু পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পারিশ্রমিক বাদ দিলে লাভ হওয়া তো দূরের কথা, লোকসানের ভাগ বেশি। এ রকম অবস্থা চলতে থাকলে গরু বিক্রি করে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
কেশবপুরের মধ্যকূল গ্ৰামের বাসিন্দা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে বি.এস.সি পাশ করে আসা রাজিবুল ইসলাম মিঠু বাড়িতে একটা গরুর খামার করেন। তার খামারে দশটি গরু আছে। কিন্তু তিনি গরুর খাবারের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, গরুর প্রধান খাদ্য বিচলির দাম অনেক বেড়ে গেছে। পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্য যেমন ভূসি, খুদ, কুড়ো, ঘাসের দামও বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে গরু পালন করা লোকসান হয়ে যাবে।
খামারের মালিক জালাল উদ্দিন রুকন জানিয়েছে, ‘আমরা খাদ্য তৈরি করে খামারে ব্যবহার করি। গত বছর যেখানে এক কেজি খাবার তৈরিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা খরচ পড়তো, সেখানে বর্তমানে খরচ পড়ে ৪০ থেকে ৪২ টাকার বেশি।
আলমগীর হোসেন খামারি বলেন, ‘কেশবপুর এলাকায় প্রায় ৫ শতাধিক গরুর খামার রয়েছে। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমার মতো অনেক ছোট খামারির পথে বসার উপক্রম হয়েছে।’
কেশবপুর পাইকারি বাজারে গমের চেয়ে ভূষির দাম বেশি। প্রতিমণ গম বিক্রি হচ্ছে ৮৫০-৮৬০ টাকা। অথচ ৩৫ কেজির গমের ভূষির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৩২০-১৩৩০ টাকায়। বাজারে মটর ভূষির দামও বেড়েছে। মটর ভূষি ১৮ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। এতে এক কেজি মটর ভূষির দাম পড়ছে ৩৯ টাকার মতো। কিন্তু পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি মটর বিক্রি হচ্ছে ৩০/৩৫ টাকায়।
বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। তার উপর নিম্নমানের খাদ্যে বাজার সয়লাব। ইতোমধ্যে নিম্নমানের ভেজাল গো-খাদ্য খেয়ে অনেক খামারে গরু রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অনেক গরু ইতিমধ্যে মারা গেছে। এতে খামারিরা বিপুল পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
খামারিরা মনে করেন, স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে মনোযোগী হলে গো-খাদ্যের দাম স্বাভাবিক হতে পারতো। তারা আরো বলেন, সরকার যদি সহজ শর্তে গরু খামারিদের ও গরু পালনকারীদের ঋণ দেয় ও গো খাদ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্ৰহন করে তাহলে অনেকে গরুর খামার ও গরু পালনে উদ্বুদ্ধ হবে। এতে করে বাংলাদেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে অনেকাংশে।
Leave a Reply