শেরপুরে ১১ অক্টোবর শ্যালিকাকে(১৯) উপর্যপুরি ধর্ষণ ও ধর্ষণের চিত্র ভিডিও ধারণের অভিযোগে মুন্না খান(২৮)নামে এক কথিত সফটওয়্যার প্রকৌশলিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলার অন্যান্য অভিযুক্তরা হলো নকলা চন্দ্রকোণা এলাকার গোলাম মোস্তুফার ছেলে জিসান যুবায়ের পলক(২৩),সদর উজেলার মনিরুল পিতা-অজ্ঞাত,শহরের বটতলা এলাকার রেজাউল হক রাতুল,পিতা-অজ্ঞাত। মুল অভিযুক্ত ছাড়া বাকীরা ধরা পড়েনি । বর্তমানে মুন্না তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছেন। এদিকে রহস্য জনক কারণে ভিকটিম শ্যালিকা মেডিকেল করাতে রাজি হয়নি। জানা গেছে একটি প্রভাবশালি মহল বিষয়টির মিমাংসা করার পায়তারা করছে। পুলিশ বলছে মেডিকেল না করালেও সমস্যা নেই প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। মেয়েটিকে উদ্ধার করার সময় ধর্ষণের গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। শ্যালিকার সাথে এহেন কান্ডে টাইপিষ্ট থেকে হঠাৎ কোটিপতি বনে যাওয়া আলোচিত এই মুন্না খানকে নিয়ে এলাকায় চলছে নানা আলোচনা । বেরিয়ে আসছে চমকপদ নানা তথ্য।
কে এই মুন্না খান ?
মুন্না সদর উপজেলার সাপমারী গ্রামের আব্দুস সামাদ উরফে তোতা খানের ছেলে।তোতা খান ছিলেন পুলিশ কনেষ্টবল ৮/১০ তিনি চাকুরি তিনি অবসর গ্রহন করেন। তোতা খানের দুই মেয়ে এক ছেলে। মুন্না খান সন্তানদের মধ্যে ছোট। ২০০৯ সালে এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হলেও এইচএসসি পাশ করা হয়নি। অভাবের সংসারে সহযোগীতা করতে মুন্না ২০১২ সালের দিকে দৈনিক ৫০ টাকা মজুরিতে কাজ নেন শহরের একটি কম্পিউটারের দোকানে। এতে না পোষালে শেরপুর সারেজিস্ট্রার অফিসে কম্পিউটারে দলিল লেখার কাজ করেছেন বেশ কিছুদিন। তারপর চলে যান ঢাকায়। পরে থেকেই শুরু হয় মুন্না খানের উত্থন। এখন এই যুবক এলাকায় আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। মুন্না খানের হঠাৎ কোটিপতি বনে যাওয়া রহস্য জনক বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
মুন্না খানের আয়ের উৎস কি?
অল্পদিনের মধ্যে এই ২৮ বছর বয়সি যুবকের হঠাৎ কোটিপতি বনে যাওয়া নিয়ে এলাকার মানুষের রয়েছে নানা কথা। পুলিশের কাছে মুন্না বলেছে সে সফটওয়্যার প্রকৌশলি। কিন্ত তার বন্ধু বান্ধব ও এলাকাবাসি বলেছে সে এসএসসি পাশ। তবে কম্পিউটার নিয়ে বেশ লাড়াচাড়া করেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে সে আর্šÍজাতিক মানের একজন হ্যাকার। মানুষের একাউন্ট ও বিকাশ নাম্বার থেকে প্রযুক্তির ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তার আয়ের উৎস। অনেকেই বলেছেন ইয়াবা বেচাকেনার সাথেও মুন্না জড়িত। সম্প্রতি বেশ কিছু উচ্চাকাঙ্খি নারীর সাথে মুন্নার রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। মুন্না সংশিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে এই উচ্চাকাঙ্খি নারীদের পিছনে দুহাতে কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করেন মুন্না। তার গাড়ীতে চেনা অচেনা বেশ কিছু হুমড়া চুমড়া যুবক প্রতিদিন সন্ধ্যা অবধি ঘুরে বেড়ায়। রাতে গ্রামের বাড়ীতে বসে আড্ডা।ঐ আড্ডায় অনেক পরিচিত অপরিচিত জন আসে নিয়মিত। আড্ডায় কি হয় তা কেউ বলতে পারে না। রহস্য জনক ক্রানে মুন্নার বিরুদ্ধে এলাকার কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। শহরের দুটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে মুন্নার ব্যাংক হিসাব আছে। সূত্র জানিয়েছে এই ব্যাংক হিসাবে মুন্নার সাম্প্রতিক কালে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়। কোথা থেকে টাকা আসে কেউ জানে না। মুন্নার এই অস্বাভাবিক লেনদেন নিয়ে কয়েকবার ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রশ্নের মুখেও পড়েছেন মুন্না। এলাকার মানুষের বক্তব্য অনুযায়ি মুন্না খনের রয়েছে ঢাকায় একটি ফ্লাট ,ময়মনসিংহে একটি বাড়ী করার জমি ও একটি ফ্লাট। সম্প্রতি তিনি শেরপুর শহরের রাজবল্লবপুর এলাকায় ৭২ লক্ষ টাকায় বাড়ীসহ একটি এক কাঠা(পাচ শতক) জমি কিনেছেন। শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সংলগ্ন তিন কাঠা জমি কিনেছেন অর্ধ কোটি টাকায়। পরিবার ও নিজের ব্যবহারের জন্য রয়েছি দুটি বিলাশ বহুল গাড়ী। এই গাড়ী দুটির দাম সোয়া কোটি টাকার উপরে। রয়েছে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা দামের একটি,পনে তিন লক্ষ টাকা দামের অন্তত তিনটি মটর সাইকেল। কয়েক বছর ধরে মুন্না খানের চলাফেরা অনেকটা জমিদারি ষ্টাইলের। এলাকার মানুষের সাথে নেই তেমন সখ্যতা। মানুষজনও মুন্না খানকে এড়িয়ে চলে। এই মুন্না খান গত ৪/৫ বছরের মধ্যে এলাকায় এসে বাড়ী ছাড়া কোথাও গাড়ী থেকে নেমেছেন এমনটি কেউ দেখেনি।
এলাকার মানুষের দাবি নিন্ম মধ্যবৃত্ত তোতা খানের নুন আনতে পান্তা ফুরানো একটি পরিবার। অত্যন্ত সরল জীবন যাপন করেন তোতা খান। কিন্ত অতি অল্প সময়ে এত অর্থবৃত্তের মালিক এই তোতা খানের পুত্র মুন্না খানের টাকা কোথা থেকে কিভাবে আসলো তা তদন্ত করে দেখা হোক।
মুন্নার বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আব্দুস সামাদ উরফে তোতা খান বলেছেন ছেলের ব্যাপারে তার কোন আগ্রহ নেই। কোথা থেকে টাকা আসে তিনি(তোতা) জানেন না। নানা কারণে ছেলের সাথে বনিবনা কম বলে তোতার দাবী।
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছে, ধর্ষণসহ সকল বিষয়েই গুরুত্বের সাথে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সব গুলো প্রশ্নের উত্তর পেতে প্রয়োজনে আবারও রিমান্ডে আনা হবে । সব গুলো বিষয় তদন্তের পর্যায়ে আছে বিস্তারিত পরে জানানো হবে বলে ওসি জানিয়েছেন।
Leave a Reply