শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব শাকিলের বাসায় বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকার সেই শিশু গৃহকর্মী সাদিয়া আক্তার ফেলি অবেশেষে মারা গেল।
২৩ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ফেলি।গৃহকর্মী শিশু সাদিয়া শ্রীবরদী পৌর শহরের মুন্সীপাড়া মহল্লার দরিদ্র ট্রলিচালক সাইফুল ইসলামের মেয়ে। নির্মম নির্যাতনের শিকার এই ফেলির মৃত্যু নিয়ে ফুসেঁ উঠছে শ্রীবরদীর মানুষ।সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের ঘৃণার শেষ নেই।
২/১ দিনের মধ্যেই সঠিক তদন্ত ও বিচারের দাবীতে মানব বন্ধন করবে বলে জানা গেছে। শাকিল ও ঝুমুর দম্পতি নিজের বাড়ীর পাশেই ভাড়া বাসায় দুই সন্তান ও গৃহকর্মীকে নিয়ে থাকেন।
শাকিলের বাবা আশরাফ হোসেন খোকা ওই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। নির্যাতনের ঘটনায় শুধু মাত্র শাকিলের স্ত্রী ঝুমুরের নামে মামলা হয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও ময়না তদন্তে সূত্র জানায় মেয়েটির শরীরে এমন কোন স্থান নেই যেখানে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়নি।
যৌনাঙ্গের ভিতরে গরম লোহা ঢুকিয়ে দিয়ে মূত্রথলি ছিরে ফেলা হয়েছে। ফেলির যৌনাঙ্গ আগুনে ঝলসানো ছিল। ফেলিকে খাবার দেওয়া হতো না। পুষ্টিহীনতা ছিল চরম পর্যায়ে। তবে যৌনাঙ্গ,মূত্রথলির ইনফেকশন,সারা শরীরের আঘাত ও পুষ্টিহীনতাই মেয়েটির মৃত্যুর কারন বলে জানা গেছে।
ফেলির উপর কোন যৌন নির্যাতন হয়েছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য নমুনা ভিসেরা রিপোর্টের জন্য পাঠানে হয়েছে।
এত দিন অতি দরিদ্র এই মেয়েটি হাসপাতালে থাকলেও ওই নেতার পরিবার থেকে কেউ খোঁজ নেয়নি। শিশু এই গৃহকর্মীর এমন মৃত্যুতে এলাকাজুরে মানুষের আফসোসের শেষ নেই।
শনিবার দুপুরের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফেলির ময়না তদন্ত শেষে রাতে লাশের সৎকার কার হয়েছে। জানাযার নামাজে আসা সবার চোখেই ছিল পানি।
ফেলির পরিবার ও গ্রামের মানুষের আজাহারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
সাধারন মানুষ ও ফেলির পরিবারের প্রশ্ন শাকিলের বাসায় দীর্ঘদিন ধরে মেয়েটির উপর নির্যাতন চলে আসছে। বিষয়টি শাকিল জানে অথবা নিজেও দায়ি থাকতে পারে।
অভিযোগ শাকিলকে বাচাঁতে কিছু গোপন করা হচ্ছে? ঘটনার পর পুলিশ ঝুমুরকে গ্রেফতার করলেও রহস্য জনক কারনে শাকিল আসামি হয়নি।
তবে শাকিল পলাতক আছে আর শাকিলের স্ত্রী ঝুমুর জেল খানায়। সাদিয়ার বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন,সন্তানকে দুবেলা খাবার দিতে পারি না বলে ভাতের জন্য শাকিলের বাড়িতে দিয়েছিলাম।
সাদিয়ার মা আনোয়ারা বেগমের অভিযোগ, প্রতিদিন আমার শিশু মেয়েটিকে নির্যাতন করা হয়েছে। শাকিল কিছু জানে না-এটা হতে পারে না।
মানবাধিকার সংগঠন আমাদের আইনের দাবী ঘটনার সাথে স্বামী শাকিলের যোগসূত্র অবশ্যই আছে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে এই শিশুকে ছোট কোন ঘটনায় এমন জঘন্য নির্যাতন করা হয়নি।
এখানে বড় ধরনের রহস্য আছে। কারণ জানতে ঝুমুরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি। সূত্র জানিয়েছে ঘটনার সাথে শাকিলকে যেন না জড়ানো হয় তার জন্য ফেলির মা বাবাকে ভয় দেখানো হয়েছে।
শাকিলকে বাঁচাতে শুধুমাত্র ঝুমুরকে ফাসানোর নাটক করা হয়েছে। আর সরকারি দলের একটি প্রভাবতো আছেই। স্থানীয়দের দাবী ঝুমুরকে রিমান্ডে এনে নির্যাতনের কারন,আরও কেউ জড়িত আছে কিনা বের করা হোক।
জানা গেছে কুমিল্লার মেয়ে এই ঝুমুর ৮ বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে অপর স্বামী ও দুই সন্তান রেখে শাকিলের সাথে ঘর বাধে।
সূত্র জানায় ঝুমুর অত্যন্ত উচ্চ বিলাসি ও শাকিল বহুগামি। দুজনের মধ্যেই প্রেম ঘটিত সন্দেহ ও চাওয়া পাওয়া নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকতো।
উল্লেখ্য নির্যাতনের কারণে ফেলির মাথায়, পিঠে ও কাধে গুরুতর জখম ও দগদগে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে পরে প্রতিবেশী কেউ ৯৯৯-এ ফোন করে।
সাথে সাথেই গৃহকর্মী সাদিয়াকে উদ্ধার ও গৃহকর্ত্রী ঝুমুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে গৃহকর্ত্রী ঝুমুরকে একমাত্র আসামি করে মামলা গ্রহণ করে থানা পুলিশ।
শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(শেরপুর সার্কেল) আমিনুল ইসলাম জানিয়েছে এখন বিষয়টি হত্যাকান্ড। কি কারনে এমন পৈশাচিকতা করা হলো ওই শিশুটির উপর পুলিশ তার উত্তর খোঁজছে।
আরও কেউ জড়িত আছে কিনা গুরুত্বের সাথে দেখা হবে। জেল খানায় ঝুমুর অসুস্থ তাই তাকে রিমান্ডে আনা যায়নি। তবে দ্রুত ঝুমুরকে রিমান্ডে আনা হবে।
ফেলির বাবা শুধুমাত্র ঝুমুরকে অভিযুক্ত করে মামলা দিয়েছে।তদন্তে পাওয়া গেলে শাকিলকে ছাড় দেওয়া হবে না।
Leave a Reply