যশোরের কেশবপুরে বোরো ক্ষেতে গরুর বদলে মই টানছে মানুষ। এক সময় এ এলাকার কৃষকদের ঘরে ঘরে গরু, জোয়াল এবং লাঙ্গলসহ কৃষি যন্ত্রপাতি ছিল। কৃষকের জমি চাষের সাথে গরু ও মহিষের সম্পর্ক সেই আদিকাল থেকে। সাধারণত কৃষি জমিতে গরু দিয়ে টানা লাঙ্গলে জমি চাষ ও মই দিয়ে চাষের জমি সমান করে ফসল লাগানো হয়ে থাকে। আধুনিক যুগে এসে যোগ হয়েছে ইঞ্জিন চালিত পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর। গ্রামাঞ্চলে কৃষকের বড় পরিচয় ছিল যার বাড়িতে গরু, লাঙ্গল ও মই আছে।
উপজেলা সুজাপুর এলাকায় এক কৃষক তাঁর ছেলেকে নিয়ে হালচাষের জন্য মই টানছেন। এ সময় আরেক কৃষক এগিয়ে এসে তাদেরকে মই টানতে সহযোগিতা করেন। পিছনে একজন কৃষক মই ধরছেন আর সামনে কাঁধে জোয়াল এর বদলে দঁড়ির মাথায় কাঠি বেঁধে নিয়ে দুইজন কৃষক ক্ষেতে মই টানছেন। বুধবার দুপুর ১টার দিকে কেশবপুর উপজেলার গরালিয়া বিলে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
কথা হয় বোরো ক্ষেতে গরুর বদলে মই টানতে থাকা উপজেলার সুজাপুর গ্রামের কৃষক ছবেদ আলী সরদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, জমি চাষাবাদ করে ছয় সদস্য পরিবারের সারা বছরের খাদ্যের যোগান দিতে হয়। কিন্তু আমাদের এলাকায় ইরি বোরো চাষ ছাড়া অন্য ফসল তেমন হয় না, সে কারণে হালের গরু পালন করা হয় না। আগে আমারও হালের বলদ ছিল। সারা বছর গরু পালন করতে যে টাকা খরচ হয় তা দিয়ে আমাদের মত কৃষকের গরু পোষা সম্ভব না। এখন বিচালীসহ গো খাদ্যের অনেক দাম। গরু দিয়েই ক্ষেতে মই দিতে হয়। বর্তমানে আমার হালের বলদ না থাকায় নিজের ছেলেকে দিয়ে সকাল থেকে বাবা-ছেলে মিলে ক্ষেতে মই টানছি। কৃষক ছবেদ আলী সরদারের ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, গরালিয়া বিলে ৬ বিঘা জমিতে আমরা চলতি বোরো মৌসুমে ধান চাষ করব। সকল জমিতেই গরুর বদলে নিজেদেরই মই টানতে হবে। মই টানতে সহযোগিতা করতে আসা কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, গরুর বদলে মই টানতে তিনজন মানুষের প্রয়োজন। একজন দিয়ে মই টানা অসম্ভব। তাই একজন প্রতিবেশী হিসেবে আরেক কৃষককে সহায়তার জন্য মই টানার কাজে আমি তাদেরকে সাহায্য করেছি।
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, তিনি ওই গ্রামের একজন ভালো কৃষক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইরি ধান চাষ করে আসছেন। এবারও তিনি ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এলাকায় হালের বলদ অমিল হওয়ায় ছেলেকে দিয়ে ক্ষেতের মই দিতে হচ্ছে। ওই কৃষকের ছেলে কবির হোসেন বলেন, করোনার জন্য কলেজ বন্ধ থাকায় সংসারে বাবাকে সহযোগিতা করতে বোরো ক্ষেতে মই টানার কাজ করছি।
ফতেপুর গ্রামের কৃষক হাবিবুল্লাহ বলেন, আগে হাল চাষের জন্য প্রত্যেক কৃষকের ঘরে গরু, লাঙ্গল ও মই থাকতো। সময়ের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া এখন গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে গেছে। এখন ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রযুক্তির পাশাপাশি জমি দ্রুত তৈরিতে গরু টানা লাঙ্গল ও মইয়ের পরিবর্তে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে গরুর টানা লাঙ্গল, মই এখন কেশবপুরে তেমন একটা চোঁখে পড়লে না। কেশবপুর থেকে হালের বলদ প্রায় বিলুপ্তির পথে। সে কারণে তিনি নিজে ও ভাইদের সহযোগিতায় চলতি বোরো মৌসুমে ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করা ৭ বিঘা জমির উঁচু-নিচু অংশ বা চাকার দাগ সমান করতে গরুর পরিবর্তে মই টানছেন।
কিন্তু গ্রাম বাংলার কৃষকের গরু দিয়ে টানা হাল, মইয়ে জমি তৈরিতে সময় লাগতো। সময়ের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া এখন গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে গেছে। এখন ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রযুক্তির পাশাপাশি জমি দ্রুত তৈরিতে গরু টানা লাঙ্গল ও মইয়ের পরিবর্তে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক যন্ত্রের ব্যাবহারে গরুর টানা লাঙ্গল, মই এখন কেশবপুরে তেমন একটা চোখে না পড়লেও ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করা জমির উঁচু-নিচু অংশ বা চাকার দাগ সমান করতে গরুর পরিবর্তে মই টানছে মানুষ। মইয়ে হালকা কিছু ওজন দিয়ে তা দু’জন কিংবা একজন টেনে জমির প্রয়োজনীয় অংশ দ্রুত সমান করে ফেলছে। কেশবপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, ফতেপুর, গরালিয়া বিলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এখন পুরোদমে কৃষক বোরো ধান রোপণ করছেন। আধুনিক যন্ত্র দিয়ে চাষ করা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণের আগে কৃষক নিজে জমিতে মই টেনে সমান করে চারা রোপণ করছেন। এলাকার কৃষকরা জানান, পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করা জমিতে চাকার দাগ থাকায় তা সমান করতে নিজেরা মই টেনে সমান করেছেন। ওই এলাকার আবুল হোসেন বলেন, তার ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান চারা রোপণের পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করে নেয়ার পর নিজেরাই মই টেনে জমি সমান করে চারা রোপণ করবেন। কৃষকরা আরো জানান, আধুনিক যন্ত্র দিয়ে দ্রুত জমি চাষ হওয়ায় এখন গরুর লাঙ্গল, মই হারিয়ে যাচ্ছে। গরুর বদলে বিকল্প হিসেবে মানুষই মই টেনে জমি সমান করে নিচ্ছে। এমন দৃশ্য উপজেলার প্রায় সব জায়গায়।।
Leave a Reply