দেড়শ বছরের পুরনো শেরপুর পৌরসভা। আগামি ১৪ ফেব্রোয়ারি নির্বাচন। এই পৌরসভার নির্বাচনে দুই দলের মনোনয়নে নানা নাটকীয়তা শেষে চলছে ধুম প্রচারনা। চলছে ভোটের হিসাব। দুই বড় দলের প্রার্থী,নিজ নিজ দলের অবস্থান,স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তৎপরতা ইত্যাদি নানা কারণে জটিল সমীকরনে আবর্তিত হচেছ ভোটের মাঠ।
জানা গেছে আওয়ামীলীগের নৌকা নিয়ে মাঠে আছেন বর্তমান মেয়র সাবেক ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি জেলা আওয়ামলিীগ নেতা দুই মেয়াদের বর্তমান মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন। মেয়র থাকা কালিন জন সম্পৃক্ততা কম থাকলেও আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে বর্ণাঢ্য পারিবারিক ও নিজস্ব ঐতিহ্য,শিক্ষাগত যোগ্যতা,ব্যক্তিত্ব, কেন্দ্র ও স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক পরিচিতির কারণে মনোনয়ন বোর্ড লিটনকে নৌকা দিয়েছেন। তাছাড়া মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে এড.রফিকুল ইসলাম আধার(জগ) ও আরিফ রেজা (চামচ)। প্রকৌশলি আতাউর রহমান(খেজুরগাছ) ও আনোয়ার সাদাত সুইট (মোবাইল) নামে আরও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী পোষ্টার সর্বস্ব প্রার্থী আছেন।
অপরদিকে বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে মাঠে আছেন কলেজ শিক্ষক, বিএনপি নেতা মামুনুর রশিদ পলাশ। পলাশ রাজনীতিতে নতুন ও বয়সে তরুণ। পলাশের বাবা প্রয়াত এড.সাইফুল ইসলাম কালাম ছিলেন বিএনপির জাগ দল থেকে শুরু করে আমৃত্যু বিএনপির সভাপতি। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সজ্জন,জনপ্রিয় ও আপাদ মস্তক জাতীয়তাবাদী চেতনার একজন মানুষ। দলমত নির্বিশেষে তিনি একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদ ছিলেন। পলাশের পরিচিতি কম থাকলেও বাবার পরিচিতি,নিজের ক্লিন ইমেজ,শিক্ষাগত যোগ্যতা,পেশা ও পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য নানা কারনে কেন্দ্র পলাশের হাতেই ধানের শীষ নিরাপদ বলে মনে করেছে।
নির্বাচন সন্নিকটে ভোটারেরা নানা সমীকরণে প্রার্থীদের জয় পরাজয় বিচার করছেন। এখানে আওয়ামীলীগ-বিএনপির ভোট কাছাকাছি। জনমনে ধারনা মনোনয়ন দ্বন্দ ও দলীয় গ্রæপিং নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। মাঠে দেখা যাচ্ছে বিবাদ মান দুটি গ্রæপে লিটনের সাবেক শত্রæরা এখন বড় মিত্র। নির্বাচনকে ঘিরে গ্রæপিং এ নতুন মেরু করন হয়েছে। এই মেরু করণও ভোটে প্রভাব ফেলেতে পারে। প্রার্থীর সাবেক মিত্ররা নৌকার জন্য মাঠে আছেন তবে উচ্ছাস কম। নৌকার জন্য সবাই কমবেশী এক,তবে প্রাথীর হালনাগাদ গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে নিজ দলে বিতর্ক আছে। সুবিধা পাওয়া না পাওয়ার হিসেবেও রয়েছে মান অভিমান। মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমর্থকরা কেউ কেউ এখনও নীরব বলে অভিযোগ আছে। তবে যত যাই হোক শেষে আওয়ামীলীগের ভোট নৌকাতেই যাবে এমন বিশ্বাস দলের নেতাদের।
অপর দিকে আওয়ামীলীগে প্রার্থী একাধিক। সরকারি দলে একাধিক প্রার্থীর অসুবিধা বিএনপি ঘরে তুলতে পারলে বিএনপি সুখবর পেতে পারে। আবার বিএনপি প্রার্থীর বয়স পরিচিতি,অভিজ্ঞতা,নেতাকর্মীদের সাথে স্বক্ষতা,দলীয় অবস্থান,গ্রæপিং নিয়ে ভোটারদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্থি আছে। পৌর এলাকায় বিএনপির এত সংখ্যক ভোট থাকলেও ১৯৯২ সালের পরে এখানে বিএনপি আর সফলতা পায়নি। এখানে ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির তিক্ত অভিজ্ঞতা অনেক পুরনো। দলের অসংখ্য নেতাকর্মী মামলায় জর্জরিত। মামলা হামলার কারনে নেতাকর্মীরা ভোটের দিন ঝুঁঁঁকি নিয়ে ভোট কেন্দ্র যাবে কিনা তা নিয়ে জনমনে সংশয় আছে। মনোনয়ন ও দলে আধিপত্য নিয়ে নেতৃত্বে মন কষাকষি ভোটে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তবে আশার কথা হলো প্রতিযোগী দল আওয়ামীলীগের প্রার্থী একাধিক। বিএনপির রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক। মানুষ কেন্দ্রে যেতে পারলে জয়ের সম্ভবনা রয়েছে বেশ।
আবার আওয়ামীলীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী হামলা,অফিস মাইক ভাংচুর মাথায় নিয়েই নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত রেখেছেন। অবস্থা দৃষ্ঠে মনে হয়েছে বিএনপি নয় দলের বিদ্রোহীরাই সরকারি দলের প্রার্থীর কাছে এখন ঘরের শত্রæ বিভীষনে পরিনত হয়েছেন। সরেজমিনে জানা গেছে মার্কা যেহেতু ভিন্ন সেহেতু নানা কারনে এই দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ ও বিএনপির ভোটের বড় একটা অংশে ভাগ বসাচ্ছে। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে যিনি আঞ্চলিক ও ওই দুই দল থেকে বেশী ভোট টানতে পারবে তার সম্ভবনার কথা জুড়ালো হচ্ছে। ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ওই দুই দলের প্রার্থীর বাইরে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বঞ্চিত নেতাকমীর্দের একটা বিরাট অংশ কাজ করছে। প্রকাশ্যে পিছনে নেতা না থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থী এড.রফিকুল ইসলাম আধার আঞ্চলিক ও দুই দলের বঞ্চিত ভোটারদের মাঝে বেশ জায়গা করে নিয়েছেন। অপর বিদ্রোহী আরিফ রেজার বাবা ছিলেন জেলার বিশিষ্ঠ শ্রমিক নেতা ও বোন সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি। অর্থবৃত্তের অভাব নেই। প্রার্থী নিজেও ট্রাক লড়িসহ ২৪টি আঞ্চলিক শ্রমিক সংগঠনের নেতা। শ্রমিক ও নিজ এলাকায় ভোটারদের মধ্যে গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে বেশ। কিন্ত নির্বাচনের দিন বেশ কিছু কেন্দ্রে সাহস করে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেউ এজেন্ট থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিদ্রোহী দুই প্রার্থীর অভিযোগ সরকারি দলের প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের আতংকের মধ্যে রেখেছেন। সম্ভাব্য এজেন্টদের এখন থেকেই হুমকি দামকি দেওয়া হচ্ছে। নিজেরাই প্রান সংশয় নিয়ে দীর্ঘদিন বাড়ীতে ঘুমাতে পারেন না বলে জানিয়েছেন।
বিএনপি প্রার্থী মামুনর রশিদ পলাশ বলেছেন বিএনপি উজ্জীবিত। তবে নেতাকর্মীদের হুমকি দামকি মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠ থাকলে তিনি পাশের ব্যাপরে শতভাগ আশা ব্যক্ত করেছেন।
আওয়ামীলীগ প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া লিটন জানিয়েছেন, ভোটাররা অভিজ্ঞতা.সততার ও উন্নয়নকে মাথায় রেখেই ভোট দিবে। মার্কা যেহেতু নৌকা একজন নেতাকর্মীও মার্কার বাইরে ভোট দিবে না। দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। আওয়ামীলীগ একতা বব্ধ সুতারাং জয় সুনিশ্চিত।
তবে ভোটারেদের জিজ্ঞাসা একটাই-ভোট দেওয়া যাবে তো। পৌর নাগরিকরা বিনা বাঁধায় ভোট দিতে মুখিয়ে আছে বলে সাধারন ভোটাররা জানিয়েছে।
Leave a Reply