নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি
পাহাড়ে মেঘ দেখলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গারো পাহাড়ের গা-ঘেঁষা শেরপুরের নালিতাবাড়ীর মানুষের মধ্যে। কারণ বৃষ্টি এলেই ভয়ানক রূপ ধারণ করে পাহাড়ি নদী ভোগাই ও চেল্লাখালি। এই নদী দুটি ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে এসেছে। ভারতের পাহাড়ে বৃষ্টি হলেই ঢল নামে এই দুই নদীতে।
২০২৪ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পানিতে একাকার হয়ে যায় পৌরসভা সহ ১২ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। সে সময় যে সমস্ত নদীর পাড় ভেঙে যায় সে গুলির মেরামত হয়নি আজো। তাই নালিতাবাড়ীর উত্তরে মেঘ দেখলেই আতঙ্ক ছড়ায় এলাকার মানুষের মাঝে। প্রার্থনা আর যেন বৃষ্টি না হয়। আর যেন নদীতে ঢল না নামে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে না উঠতেই এরই মধ্যে গত কয়েকদিনের বর্ষণে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢল নামে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতে। পৌরশহরের নিজপাড়া এলাকা নদীর পাড় ভাঙা দিয়ে পানি প্রবেশ করে কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। পানি দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় মানুষের ক্ষতিও হয় কম। আর চেল্লাখালী নদীর পানিতে কলসপাড় ও যোগানীয়া ইউনিয়নের ২২ হেক্টর জমির ধান ক্ষতি হয়েছে।
১৯৮৮ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয় ২০২৪ সালে। সে সময় বন্যায় জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাত হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। পানিতে ডুবে নষ্ট হয় কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল। ভেসে যায় দেড় হাজারের বেশি পুকুর ও ঘেরের মাছ। পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৭০০ কিলোমিটার সড়ক, শতাধিক সেতু, কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাণ হারান ১০ জন।
পৌরসভা নিজপাড়া এলাকার মো.নূর হোসেন মুন্সী(৭৫)বলেন,গত বছরের বন্যায় আমার বাড়ীর পিছনে নদীর পাড় ভাইঙ্গা যায়। বছর গেলেও বান্দনের কোন ব্যবস্থা হয় নাই। উত্তরের আকাশ কালা হইলেই আমগর ঘুম হারাম হইয়া যায়। এই বুঝি পানি আইয়া পড়লো।
একই এলাকার মো.কাশু মিয়া(৭০) বলেন,বাউয়া ধান লাগাইছি কয়েকদিন পর ধানে থোর আইবো। অহন যদি ঢলের পানি আইয়া পরে আমরা মাঠে মারা যাইমু।
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মো.মশিউর রহমান বলেন,পানি দীর্ঘস্থায়ী না হওয়া দুটি ইউনিয়নে ১০ হেক্টর রোপা আমন ধান সম্পুর্ণ ক্ষতি হয়েছে। আর ১২ হেক্টও জমির ধান আংশিক খ্ষতি হয়েছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান জানান,গত বছরের বন্যায় যে সমস্ত পাড় ভেঙেছে সে গুলো বরাদ্দ পেলেই দরপত্রের মাধ্যমে কাজ করা হবে। এরমধ্যে শ^শান ঘাট ও মন্দির সংলগ্ন ভাঙা অংশ বালুর বস্তা দিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম কিন্ত বালু না পাওয়া ও ওই সমস্ত যায়গায় বড় গাড়ী প্রবেশ করতে না পারায় কাজটি সম্পন্ন করতে পারিনি।
Leave a Reply