নালিতাবাড়ী(শেরপুর)প্রতিনিধি
“সবাই যখন দাম বাড়ায় ,আমি তখন কমিয়ে দিলাম ” নকরেক কেয়ার লিখা এই পোস্টটি ব্যাপক সারা ফেলেছে ফেসবুকে। লিখাটির সারাংশ খোঁজতে গিয়ে যা দেখা গেলো তা সত্যিই প্রশংসনীয়। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার শহর থেকে নাকুগাঁও স্থল বন্দরের দুই লেন সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে স্লুইচগেট বাজার পাড় হওয়ার কিছুদুর পর গেলেই হাতের বা পাশে তাকালেই চোখে পড়ার মত একটি দোকান। সেখানে নেমেই দেখা গেলো সুন্দর চক চকে গোছানো মনোরম ভাবে বিভিন্ন ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো দোকানের সামনে বড় বড় অক্ষরে ব্যানারে লিখা“ মিষ্টি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর” পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে এখানে লাভ ছাড়া ক্রয় মূল্যের চেয়েও কম টাকায় দ্রব্য সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। অসচ্ছল পরিবারের কথা বিবেচনা করে এই বিশেষ উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে”। দোকানের ভিতর দ্রব্য মূল্যের তালিকা টানিয়ে রাখা হয়েছে। কয়েকজন পুরুষ ও মহিলা ক্রেতা কেনাকাটা করছেন।
উদ্যোক্তা ঃ ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া নামেই বোঝা যায় উনি মুসলিম নন তবু কেনো এই উদ্যোগ! জানতে চাওয়া হলে সহাস্যে তিনি জানালেন আসলে এটি করার পিছনে আমার দুটি উদ্দেশ্য প্রথমত রোজার মাসে আমাদের গরীব, অসচ্ছল ,খেটে খাওয়া মানুষেরা যেনো একটু উপকৃত হয় সেজন্যে মানবিক দিক বিবেচনায় আমি এই উদ্যোগ টি নিয়েছি। আমি আমার দোকানে বাজারের খুচরা মূল্যের থেকেও ৫-৮ টাকা কমে জিনিস বিক্রি করছি। মানুষ প্রথমে বিশ্বাস করেনি কিন্তু এখন উৎসাহিত হচ্ছে। কারন একজন যদি দুই তিন প্রকারের জিনিস কিনে তার সেখানে ১৫-২০ টাকা সাশ্রয় হয়।
দ্বিতীয়ত রোজা আসলে আমাদের দেশের ব্যাবসায়ীরা জিনিস পত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয় যা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খুবই কষ্টের হয়,অথচ পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশে আমরা দেখি রোজা উপলক্ষে ব্যাবসায়ীরা জিনিসের দাম কমিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের চিত্র অমানবিক যেটা ধর্মীয় মূল্যো বোধের সাথেও একেবারেই যায়না। তাই আমার কাজের মাধ্যমে আমি ব্যাবসায়ীদেরকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ নিয়েছি। একজন ডিম ব্যাবসায়ী আমার দোকানে এসে ব্যানাওে লেখা দেখে এবং ক্রেতাদের উৎসাহ দেখে তিনি এখন ডিমের দাম কমিয়ে বিক্রি করছেন। আমি চাই এভাবে সবাই এগিয়ে আসুক।
ক্রেতা হাতেম আলী (২২) বলেন, যেখানে আমরা মুসলমান ব্যাবসায়ীরা যেটা করেনি সেটা কেয়া আপা অন্য ধর্মের হয়েও এই মানবিক কাজটা করছে। আরেকজন নূর ভক্ত (৪০) বলেন,আমরা গরীব সারাদিন কাম কইরা বিকাল বেলা আইসা এই দোকান থেকে কম টাকায় জিনিস কিনছি বাজারের থাইক্কা অনেক কম এতে আমাদের অনেক উপকার হইতাছে। বিশেষ করে নারী ক্রেতাদেরকে বেশি দেখা গেছে তাদের একজন জামেলা বেগম(৫৫) বলেন ” কেয়া আফা যে কামডা করছে এতে আমগোর লাইগা খুব উপকার হইছে, বাজারে গেলে রিকসাভাড়া এরপর দাম বেশী। কিন্ত এই আফা একজন উপজাতি হইয়া রোজার মধ্যে সবকিছুর দাম কম নিতাছে। আল্লাহ তারে সুস্থ রাখুন।
পবিত্র রমজান মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য একটি মহিমান্বিত মাস। সংযম আর সহনশীলতার শিক্ষা দেয় পবিত্র মাহে রমজান। একজন অমুসলিম আদিবাসী নারীর এই মহৎ উদ্যোগ মানবতার ধর্মকেই উৎসাহিত করে।
Leave a Reply