নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি
অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষত বিক্ষত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার প্রাণ ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী এবং পাহাড়। নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে পাহাড় থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পাহাড় ধ্বসের। ইতি মধ্যেই নদীদুটির বিভিন্ন অংশে মাত্রাতিরিক্ত গভীর হওয়ায় দুইপাড় ধ্বস নামতে শুরু করেছে। এই ধ্বসে সদ্য হয়ে যাওয়া স্বরণ কালের ভয়াবহ বন্যায় তার প্রভাব পড়েছে সারা উপজেলায়। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে নদী ঘিরে স্থাপনা সমূহ ধ্বংসের পাশাপাশি প্রকৃতি ও বৈচিত্র হারাবে পাহাড়, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী। প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকলেও নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে ইজারা বর্হিভূত স্থান থেকে দিনে-রাতে বড় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসনের হিসেব মতে গত তিন মাসে অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে রাজস্ব আদায় করেছেন। দুইজনকে এক বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন,চারজনকে তিন মাসের কারাদন্ড দিয়েছেন। ১৫টি ড্রেজার মেশিন ভেঙেছেন এবং ১৩ লক্ষ ঘনফুট বালু জব্দ আছে। যা নিলামে বিক্রি করা হবে।
সরকারের বিধিনিষেধ অমান্য করে পাহাড় ও নদীর পাড় ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ডীয় ও সরকারি খাস জমি থেকে ভূ-গর্ভস্থ খনিজ সম্পদ মূল্যবান মোটা বালি, চিকন ধূসর বালি ও নুড়ি উত্তোলন চলছে দেদারছে। ফলে হুমকিতে পড়েছে পাহাড়,পরিবেশ, সংকটে পড়েছে পাহাড়ি নদী ভোগাই ও চেল্লাখালী। সীমান্তের পাহাড়ের ঝরনায় প্রবাহিত নালা বা ঝোড়া থেকে বালু ও নুড়ি পাথর উত্তোলনের ফলে নতুন করে পাহাড় ধ্বসের শঙ্কা তৈরী হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়,ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা নালিতাবাড়ীর বুক চিরে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী ভোগাই ও চেল্লাখালী। এ নদী দুুিটর দুপাড়ে চলছে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব। শহর থেকে উপজেলার সকল সড়কের দুপাশে বালুর স্তপ। নদী,পাহাড়,পুকুর ও সমতল ভুমি থেকে বালু উত্তোলন করে পরিবহন সুবিধার জন্য সড়কের পাশে রেখে দিয়েছেন। সড়কের পাশে স্তপ করে বালু রাখায় সাধারণ মানুষের চলাচলে ব্যপক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
চলতি বছরে ১৪৩১ সালের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ভোগাই নদীর কালাকুমা, হাতিপাগার, নয়াবিল,ফুলপুর ও মন্ডলিয়াপাড়া পাঁচটি মৌজায় মোট ৯ একর ৮২ শতাংশ ইজারা প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে চেল্লাখালী নদীর দুটি ভাগে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে চেল্লাখালী বালুমহালে বাতকুচি,পলাশীকুড়া,নন্নী,তাজুরাবাদ ও সন্যাসীভিটা এই মৌজায় ২২ একর ও বুরুঙ্গা,আন্ধারুপাড়া বাইগরপাড়া বালুমহালে দুটি মৌজায় ১৯ একর ৯ শতাংশ ইজারা দেওয়া হয়েছে। এই বালু মহাল গুলি থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেলেও প্রভাবশালীরা নদীর ত্রিশ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে যেখানেই বালু আছে, সেখান থেকেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। বর্তমানে নদীতে বালুর মজুদ শেষ হওয়ায় নদীর পাড় ভেঙে ও নদীর তল দেশের মাটি ১৫-২০ ফুট পর্যন্ত গভীর বোরিং করে নিচ থেকে খনিজ সম্পদ সাদা বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। এতে করে নাব্যতা সংকটের পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকি বাড়ছে। ধ্বংস হচ্ছে নদী তেমনি ধ্বসে পড়ছে আশপাশের স্থাপনা, বাড়িঘর। শুস্ক মৌসুমে বালু শুন্য প্রায় নদীটি পানি শুন্য হয়ে প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্রের ভারসাম্য নষ্টের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবেশ ও নদী সংশ্লিষ্টদের মতে, নদীর পাড় ভেঙে সম্প্রতি স্বরণ কালের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলা যে ক্ষতি হয়েছে তার অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন। নদীর নাব্যতা ফেরাতে যেমনি বালু অপসারণের মাধ্যমে ড্রেজিং প্রয়োজন, তেমনি নাব্যতা তথা নদীর প্রকৃতি ধরে রাখতে পরিমাণ মতো বালুও প্রয়োজন। নদীতে একেবারে বালু না থাকলে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে নাব্যতা সংকটের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক ক্ষতির ভূমিকা রাখে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাসুদ রানা বলেন, ইজারা বর্হিভূত এলাকায় বালু উত্তোলনে আমাদেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ীর সবাইকে সচেতন হতে হবে।
Leave a Reply