নালিতাবাড়ী(শেরপুর)প্রতিনিধি
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে গারো পাহাড়ে ফসলি জমিতে কৃষকের দেওয়া জেনারেটরের তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে একটি বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ ) রাত ১০ টার দিকে পাহাড়ের মধুটিলা এরিয়া পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বন্যপ্রাণী হত্যার দায়ে জমির মালিক জিয়াউর রহমান (৩৫)গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুরে মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার মো. দেওয়ান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বনবিভাগ ও স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি বন্য হাতির পাল উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের বিভিন্ন টিলায় ও জঙ্গলে অবস্থান করছে। দিনের বেলায় টিলা বা জঙ্গলে অবস্থান করলেও সন্ধ্যা নামার পর হাতির পাল দল বেঁধে ধানখেতে, লোকালয়ে নেমে আসে। বন্য হাতির কবল থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকেরা ধানখেতে জেনারেটরের মাধ্যমে তার দিয়ে ঘিরে রাখেন।
বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে প্রায় অর্ধশত বন্যহাতির একটি দল পূর্ব সমশ্চূড়া পাহাড়ের লাল টেঙ্গর এলাকায় আমন ধানের ক্ষেতে খাবারের সন্ধানে নামে। জিয়াউর রহমানের ৫০ শতাংশ ধানক্ষেতে তা-বের একপর্যায়ে পাশে থাকা বৈদ্যুতিক লাইনের স্পর্শে এলে একটি হাতি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় এবং ঘটনাস্থলেই মারা যায়। রাতেই পুলিশ জমির মালিক জিয়াউর হমানকে আটক করে। শুক্রবার সকালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের মো.আল আমীন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। ঘটনাস্থলে দুপুর ১২ টার দিকে ময়মনসিংহ বন বিভাগের বনকর্মকর্তা মো.আবদুল ওয়াদুদ, শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক সাদেকুল ইসলাম খান পরিদর্শন করেন। ময়না তদন্তের জন্য প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কমকর্তাগণ হাতির বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।
গত এক দশকে শুধু গারো পাহাড়ে মানুষের হামলাসহ নানা কারণে ৩২টি হাতি মারা গেছে। বেশির ভাগ হাতির মৃত্যু হয়েছে বৈদ্যুতিক ফাঁদে, নয়তো ধারালো অস্ত্রের আঘাতে। আর বন্যহাতির আক্রমণে ৩৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
নালিতাবাড়ী প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ভ্যটেনারী সার্জন ডাঃ সাকিব হোসেন সাগর বলেন,হাতি মৃত্যুর বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত বলা যাবে। তবে প্রাথমিক ভাবে বিদ্যুতায়িত হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.সোহেল রানা বলেন,হাতি হত্যার খবর পেয়ে আমরা নন্নী এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানকে ৫৪ ধারায় আটক করা হয়। পরবর্তীতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের মো.আল আমীন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। আসামীকে গ্রেফতার দেখিয়ে আজ আদালতে প্রেরন করা হয়।
শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক সাদেকুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, জেনারেটরের বিদ্যুৎ দিয়ে বন্যহাতি হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিয়াউর রহমান জিয়া নামে একজনকে আটক করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের বনকর্মকর্তা আ.ন.ম.আবদুল ওয়াদুদ বলেন,হাতি মানুষের ক্ষতি করলে সরকার তার ক্ষতি পুরন দিয়ে দেয়। তাহলে এভাবে হাতি হত্যা করতে হবে কেন। এই জমির মালিক জিয়াউর রহমান কিছুদিন আগে ৪০ হাজার টাকা ক্ষতি পুরন পেয়েছে। গত ১০ বছরে এই এলাকায় বনবিভাগ ২ কোটি টাকা ক্ষতি পুরন দিয়েছে।
Leave a Reply