আন্তর্জাতিক পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে শেরপুরে ২৫ জুলাই সোমবার শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণমাধ্যম উন্নয়ন সংগঠন সমষ্টি গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটরের সহায়তায় এ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তোফায়েল আহম্মেদ। র্যালিতে জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আসলাম খান, সমন্বয়কারী হাকিম বাবুল, শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শরিফুর রহমান, সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন, সিআইপিআরবি ব্যবস্থাপক কাফি, সহ স্থানীয় সাংবাদিক, সরকারি-বেসরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উন্নয়ন কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রার শুরুতে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রস্তাবনায় জাতিসংঘ ২৫ জুলাইকে আন্তর্জাতিক পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষনা দিয়েছে। গত বছর থেকে দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন দেশে ৪০ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। যার মধ্যে ৩০ জনই ৫ বছরের কম বয়সী শিশু। পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, সচেতন হতে হবে। এজন্য শিশুদের নজরে রাখা, অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠিানিক তত্বাবধানে রাখা, ৬ বছর বয়স থেকে শিশুদের সাঁতার শেখানো এবং বাড়ীর আশপাশের জলাশয় ঘোরাও দিয়ে রাখতে হবে। এতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই কমবে।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে গণমাধ্যমের সহযোগিতা নিয়ে উন্নয়ন যোগাযোগ সংগঠন ‘সমষ্টি’ সচেতনতা বৃদ্ধি ও নীতি-নির্ধারণী উদ্যোগ সৃষ্টিতে কাজ করছে। সমষ্টির তথ্যমতে, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে পানিতে ডুবে ৫৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর ৯৯ শতাংশই ১৮ বছরের কম বয়সী। গত বছরের একই সময়ে মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৭ জনের। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)-এর গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিবছর পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। সংস্থাটির উপ-নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রহমান বলেন, ‘অপঘাতজনিত কারণে আমাদের দেশে প্রতিবছর যে সংখ্যক শিশু মারা যায়, তার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে।’
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ বলা হয় সরকারের তেমন উদ্যোগ না থাকা। তবে এ মৃত্যুরোধে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্পও তৈরি করেছে। সম্প্রতি প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিশুর সুরক্ষা এবং মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ২৭১ কোটি ৮২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘ইনটিগ্রেটেড কমিউনিটি বেইজড সেন্টার ফর চাইল্ড কেয়ার, প্রটেকশন অ্যান্ড সুইম-সেইফ ফেসিলিটিজ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারাদেশে ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় ৮ হাজার শিশু-যতœকেন্দ্র পরিচালনা করা হবে। এসব যতœকেন্দ্রে কাজ পাবে ১৬ হাজার গ্রামীণ নারী। প্রতিটি যতœকেন্দ্রে ২৫ শিশুকে ভর্তি করা হবে। একই সঙ্গে ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখানো হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমাজভিত্তিক শিশু যতœকেন্দ্র স্থাপন এবং শিশুদের সাঁতার শেখানোসহ অভিভাবকদের সচেতন করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে; যা শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
Leave a Reply