নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা খলচান্দা কোচপাড়া গ্রামের বসবাসরত কোচ আদিবাসীদের তাঁত যন্ত্রের মাধ্যমে নিজ হাতে তৈরিকৃত ঐতিহ্যের পোষাক রাঙ্গা লেফেন বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহন করেছে উপজেলা প্রশাসন। এরজন্য সরকারীভাবে সকল ধরনের সহায়তা করছেন ইউএনও খৃষ্টফার হিমেল রিসিল।
জানা গেছে, আদিকাল থেকে উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের খলচান্দা গ্রামের কোচ আদিবাসী নারীরা নিজেদের উদ্যোগে কাঁঠ ও বাঁশের যন্ত্রাংশ দিয়ে তাঁতযন্ত্র বানিয়ে তাতে রঙ্গিন সুতা দিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় বসে নিজ হাতে বুনন করতেন তাদের ঐতিহ্যের পোষাক রাঙ্গাপাতি বা রাঙ্গা লেফেন। যা পরিধান করে বছর জুড়ে তাদের পারিবারিক বস্ত্রের চাহিদা মিটতো। এমনকি কোচ আদিবাসীদের নিজেদের ঐতিহ্যের প্রকাশ ঘটতো এই রাঙ্গা লেফেন পরিধানের মাধ্যমে। তাই এই কোচপল্লীর প্রতিটি ঘরেই ছিল এই নিজস্ব তাঁতযন্ত্র। এই যন্ত্র দিয়ে কোচ নারীরা নিজেদের পরিধানের জন্য নিজ হাতে তৈরি করতেন রাঙ্গা লেফেন। এখন ওই গ্রামে দুই একটি বাড়িতে এই যন্ত্র থাকলেও সুতা সংকটে কেউ আর লেফেন বুনন করেন না। এছাড়া কালক্রমে নানা প্রতিকুলতায় ও আর্থিক দৈন্যতায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল এই কোচদের তাঁত শিল্প। সম্প্রতি সীতারাণী নামের কোচ রমনী নিজ হাতে রাঙ্গা লেফেন বুননের খবর পান ইউএনও। খবরে ওই গ্রামে ছুটে যান নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল। তিনি কোচ নারীদের নানা সমস্যার কথা শুনে তাদের তাঁত শিল্প ও ঐতিহ্যের পোষাক রাঙ্গা লেফেনকে টিকিয়ে রাখতে জরুরী উদ্যোগ গ্রহন করেন।
ওই গ্রামের বাসিন্দা সীতারাণী কোচ বলেন, নানা সংকটের কারনে আমরা তাঁতের মাধ্যমে রাঙ্গা লেফেন বুনন করতে পারছিলাম না। একদিন আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য নিজ যন্ত্রে একটি লেফেন তৈরি করছিলাম। এ খবর ইউএনও পেয়ে আমাদের এখানে ছুটে আসেন। সব খবর শুনে পরবর্তীতে ইউএনও আমাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এডিপির অর্থায়নে তাঁতশিল্প ঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ কওে দেন। এখানে ১০-১২জন কোচ নারীরা প্রশিক্ষণ গ্রহন করে তাদের ঐতিহ্যের পোষাক রাঙ্গা লেফেন তৈরি করতে পারবেন। এরজন্য আমরা পাশ্ববর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার হালচাটি গ্রামের এক কারিগরকে ১১ টি তাঁতযন্ত্র বানানোর জন্য অর্ডার দিয়েছি।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, প্রাথমিক ভাবে তাদের কাজটি শুরু করার জন্য সহায়তা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ওদেও জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। ওই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র করার কাজ চলছে৷ ওখানে একটি বিক্রয়কেন্দ্র করা হবে৷ এতে তাঁদের তৈরীকৃত পোশাক বিক্রি করে জীবন- জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে৷
Leave a Reply