নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ধানখেতে কৃষকদের ফাঁদ জেনারেটরের তারে জড়িয়ে একটি মাদি বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার(৩১ অক্টোবর) রাতে উপজেলার সীমান্তবর্তী বাঁতকুচি গ্রামের রাবার বাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে ওই মৃত হাতিটিকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে মাটিতে পুতে রেখেছে বন বিভাগ।
বন বিভাগের কর্মীরা রাতেই ঘটনাস্থল থেকে একটি জেনারেটরটি জব্দ করেছেন। এই ঘটনায় ওই এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলামকে (৪০) আটক করা হয়েছে। তিনি ওই এলাকার মৃত ছোরহাব আলীর ছেলে।
স্থানীয় সুত্র ও বন বিভাগ জানায়, রোপা আমনের ধানে মাত্র শীষ দেওয়া শুরু করেছে। কয়েকদিন পর ধান বেড় হবে,ধান পাকা শুরু হবে। হাতির দল সেই ধান খাওয়ার জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে ২৫-৩০টি বন্য হাতির পাল উপজেলার সীমান্ত এলাকায় গারো পাহাড়ের বিভিন্ন টিলায় ও জঙ্গলে অবস্থান করছে। দিনের বেলায় টিলা বা জঙ্গলে অবস্থান করলেও সন্ধ্যা নামার পর হাতির পাল দল বেঁধে ধানখেতে, লোকালয়ে নেমে আসে। এ জন্য কৃষকেরা ফসলরক্ষায় মশাল জ্বালিয়ে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হাতির পাল প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি রাবার বাগান এলাকায় খাবারের সন্ধানে কৃষকের রোপিত আমন ধানক্ষেতে নেমে আসে। উঠতি আমন ফসল বাঁচাতে গ্রামের কৃষকরা আগে থেকেই ধানক্ষেতের আশপাশ এলাকায় একটি জেনারেটর স্থাপন করে জিআই তারের মাধ্যমে রাতের বেলায় বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে রেখেছিল। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, বৈদ্যুতিক বাল্বের আলো দেখলে বন্যহাতির দল নাকি ধানক্ষেতে তান্ডব চালাতে আসতে ভয় পায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে কোন ভাবেই ক্ষুধার্ত হাতিগুলোকে দমানো যাচ্ছিল না। হাতিগুলো খাবারের সন্ধানে ওই এলাকার ধানক্ষেতে নামার সময় সেখানে স্থাপিত জেনারেটরের বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে ঘটনাস্থলেই ১০-১২ বছর বয়সী একটি মাদি বন্যহাতি মারা যায়। একপর্যায়ে গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে বাকি বন্যহাতিগুলো সেইস্থান ত্যাগ করলে গ্রামবাসীরা এগিয়ে গিয়ে দেখেন সেখানে একটি মাদি বন্যহাতি জেনারেটরের তারে শক খেয়ে মারা গেছে। পরে শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক ও মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেনারেটর স্থাপন করে বন্যহাতি হত্যার অভিযোগে শহিদুল ইসলামকে আটক ও আরো অজ্ঞাত ১০-১২ জনের নামে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক ফারুক হোসেন, মনছুর আলী, সুরুজ আলী, জাহেদ আলী ও কৃষাণী আমেনা বেগম জানান, বন্যহাতির দল প্রায় প্রতিরাতেই আমাদের পাহাড়ি এলাকায় তান্ডব চালিয়ে ফসলের ও ঘরবাড়ির ক্ষতি সাধন করে আসছে। সরকারীভাবে অনেকেই ক্ষতিপুরনও পেয়েছেন। তবে তারা জানান, এসব ক্ষতিপুরনের টাকা পেতে অনেক সময় লেগে যায় ও হয়রানির স্বীকার হতে হয়। তারা দ্রুত হাতি মানুষের দ্বন্দের সমাধান চান।
গত এক দশকে শুধু গারো পাহাড়ে বন্যহাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। মানুষের হামলাসহ নানা কারণে ৩০টি হাতি মারা গেছে।এ নিয়ে ৩১ টি হাতির মৃত্যু হলো। বেশির ভাগ হাতির মৃত্যু হয়েছে বৈদ্যুতিক ফাঁদে, নয়তো ধারালো অস্ত্রের আঘাতে।
এ ব্যাপারে শেরপুরের সহকারী বনসংরক্ষক মো. সাদেকুল ইসলাম খান বলেন, বন্যহাতির মৃত্যুর খবর পেয়ে শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন পদির্শন করে জেনারেটর স্থাপন করে বন্যহাতি হত্যা করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই অভিযোগে শহিদুল ইসলাম নামে একজনকে আটক ও একটি জেনারেটর জব্দ করা হয়েছে। এর সাথে জড়িত সন্দেহে আরো ১০-১২ জনের নামে বন্যপ্রানী সংরক্ষণ আইনে শেরপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই সাথে সন্দেহভাজন বাকী আসামীদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি অরো জানান, আমরা বন্যহাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারীভাবে ক্ষতিপুরন দিচ্ছি। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কোনক্রমেই বন্যহাতিকে হত্যা করা যাবে না।
Leave a Reply